শীতের আগমনে ব্যস্ততা বাড়ছে কুমারপাড়ায়
বিভিন্ন সাইজের মাটির ভাঁড় তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা

শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার গাছীরা। গাছীদের সাথে তাল মিলিয়ে খেজুরের রস আর গুড় সংরক্ষণে পোড়া মাটির ভাঁড় (গুড় রাখার পাত্র) তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। শীত মৌসুমে খেজুর রসের গুড় উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন গাছীরা। কিন্তু সকলের নজরের বাইরে থেকেও মৃৎ শিল্পীরা সরাসরি খেজুরের রস আর গুড় সংরক্ষণের পাত্র তৈরির কাজে যুক্ত থাকেন। সাধারণত পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পোড়া মাটির ভাঁড় তৈরির কাজ করে থাকেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরা ভাঁড় তৈরি করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা মাটির ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বংশ পরম্পরায় এ আদি পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন এই এলাকার মৃৎশিল্পীরা। যেখান থেকে জেলা ছাড়িয়ে জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হয় পোড়া মাটির ভাঁড়সহ মাটির বিভিন্ন নান্দনিক জিনিসপত্র। সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি গ্রামের মৃৎশিল্পীদেরকে দেখা গেছে হাতের কারুকার্যের নিখুঁত ছোয়ায় ভাঁড় তৈরি করছেন। ছাঁচে ভাঁড় তৈরির দৃশ্যটি খুবই নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর। ভাঁড় তৈরির দৃশ্য অবলোকন করার জন্য যে কেউ থমকে দাঁড়াবে। এই এলাকায় নারী ও পুরুষ উভয়কেই ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর ছোট ভাড় ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি সাইজ ৮০ থেকে ১০০ ও বড় গুলোর জোড়া ১৫০ টাকা দরে বিক্রি চলছে। এখন পুরোদমে শুরু না হলেও আর ১০-১৫ দিনের মধ্যে আশানুরূপ পরিমাণে বিক্রি শুরু হবে।
ভাঁড় তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে কানু পাল বলেন, ‘ভাঁড় তৈরির প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি। এই মাটি সংগ্রহ করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকবার ঝুরঝুরে করা হয়। তারপর পা দিয়ে ছেনে মোলায়েম করতে হয়। মোলায়েম মাটি বোলে দিয়ে বালির সংমিশ্রণে চাপড় বানানো হয়। এরপর ছাঁচে দিয়ে হাতের কারুকার্যে ভাঁড়ের কানাসহ উপরিভাগ তৈরি করা হয়। এই ছাঁচে ভাঁড়ের নিচের অংশ তৈরি করার পর দুটি অংশকে জোড়া লাগানো হয়। তারপর দুইদিন রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানো ভাঁড় আগুনে পোড়ানো হয়। পাঁচ ঘণ্টার মতো পোড়ানোর পর ভাঁড় ব্যবহারের ব্যবহারের উপযুক্ত হয়।
এবিষয়ে গড়াইটুপি গ্রামের শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল জানান, শীতকালে খেজুরের রসের ওপর ভিত্তি করে মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা বাড়লেও বছরের অন্যান্য সময় তাদের অলস সময় পার করতে হয়। কালের বিবর্তনে আর আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোয়ায় মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আগামীর কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না।
দিন দিন যে হারে খেজুরগাছ কমছে, তাতে খেজুরের রসের গুড়ভিত্তিক অর্থনীতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। খেজুরগাছ সংরক্ষণ ও নতুন করে রোপণ করার উদ্যোগ না নিলে গাছীও থাকবে না, খোঁজও মিলবে না মৃৎশিল্পীদের। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিলে দুটি পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে।