এলাকার খবরসারা বাংলা

বাড়ি বাড়ি শোভা পাচ্ছে চালকুমড়া: বড়ি দেয়ার প্রস্তুতি গৃহিনীদের

চুয়াডাঙ্গায় আর অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হবে কুমড়া, মুলা ও পেঁয়াজের বড়ি’র উৎসব। গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়ির ঘরের চাল, মাচায় আর বাড়ির ছাঁদে শোভা পাচ্ছেন গাড় সাদা রঙের চালকুমড়া।

চালকুমড়ার জালি আর পরিপক্ব চালকুমড়া গ্রামীণ জনপদের সাথে সাথে শহরের মানুষেরও মাঝেও বেশ পরিচিত। জনপ্রিয় এ সহজলভ্য চাল কুমড়ার জালি সবজি তরকারি হিসেবে বেশ পরিচিতও বটে। গ্রামাঞ্চলের ঘরের চালে, টিন ও ছাঁদে এ সবজি ফলানো হতেন বহু আগে থেকেই ফলে এটি চাল কুমড়া নামে সকলের কাছে সুপরিচত।

কুমড়া শুধু এখন রান্না ঘর, গোয়াল ঘর, খড়ি ঘরের চালে নয় বরং এটি এখন মাঠের জমিতেও চাষ করা হচ্ছে, ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে যারা মাঠে এ সবজি চাষ করে থাকেন তারা মুলতঃ কচি চাল কুমড়া করে সবজি হিসেবে বিক্রয় করে থাকেন। এ গাছের কচি পাতা শাক হিসেবেও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। সবুজ ছোট চাল কুমড়া তরকারির হিসেবে ব্যবহার হলেও তা বড় হওয়ার সাথে সাথে সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে চুনের মতো গাড় সাদা রঙের রূপ ধারণ করেন।আর পরিপূর্ণ সাদা রঙে পরিপক্ব হলে তা তা আর সবজি হিসেবে খাওয়া যায়না। এসময় ঐ চাল কুমড়া দিয়ে গ্রামীণ জনপদ সহ শহর অঞ্চলের মা,বোন, বধূরা মাসকলাই এর ডাল আর চাল কুমড়া দিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করে থাকেন।

দামুড়হুদা উপজেলার সকল গ্রামের বাড়িতে টিন, গোয়াল ঘরের চালে,পাকাঁ ঘরের ছাঁদে কিংবা বাসাবাড়িতে আঙ্গিনায় বাঁশ ও কুঞ্চি দিয়ে তৈরি করা চালের মাচা গুলোতে সাদা চুনের মতো চালকুমড়া শোভা পাচ্ছেন।আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই জেলা শহর সহ উপজেলার সকল গ্রামের পাড়া- মহল্লায় সাদা চুন ধরা পরিপক্ব এ চালকুমড়াগুলো দিয়ে সুস্বাদু বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করবেন গ্রামের গৃহিণী সহ নববধূরা। জালি অবস্থায় এ চাল কুমড়া পুষ্টিকর সবজি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।

সরেজমিনে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় সকল বাড়িতেই পাকা চুনের মতোন সাদা সাদা চালকুমড়া ঝুলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রামীণ জনপদের নারীরা কুমড়া কুঁড়ে কলায় ডাল দিয়ে বড়ির উঠান ও ছাঁদে বড়ি তৈরির কাজে সম্পৃক্ত হবেন।শীত যত বেশি পড়বে বড়ি ততটাই সুস্বাদু হবেন আর শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে তৈরি করা হবে কুমড়া সহ মুলা ও পিঁয়াজ দিয়ে বড়ি তৈরির উৎসব।বড়ি তৈরি শেষে তীব্র এ শীতের সাথে সাথে সকাল দুপুরের মিষ্টি রোদে নেট বা তারের জালের উপর উপরে বসানো বড়িগুলো শুকাতে দেওয়া হবে। গ্রামীণ নারীদের অনেকেই আবার চাল কুমড়া সহ বড়ি তৈরি করে হাট বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করে থাকেন। কুমড়ার এ বড়ি তৈরির জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকেন চাল কুমড়া, কলাইডাল।অনেকে আবার কুমড়ার বড়ির সাথে সাথে মুলা, পিঁয়াজ দিয়েও বড়ি তৈরি করে থাকেন।তবে এক্ষেত্রে কুমড়ার বড়ি অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকেন।শীতের এ মৌসুমের পুড়া সময়টাতে গ্রামে গ্রামে বড়ি তৈরির এ-দৃশ্যে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবেন অনায়সে।শীতের এ সময়টাতে গ্রামীণ নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবানও হয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে বহু স্বামী পরিত্যক্ত , বিধবা অসহায় দরিদ্র নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে হচ্ছেন সাবলম্বী।

চালকুমড়া চাষের বিষয়ে বেশ ক’ একজন কৃষকদের সাথে কথা বললে, তারা বলেন, এঁটেল ও দোআঁশ মাটিতে এ চাষ খুব ভালো হয়।এ চাষ প্রায় সারা বছরই করা যায়।তবে বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারী হতে মে জুন পর্যন্ত এর বীজ রোপন করার উপযুক্ত সময়। বীজ লাগানোর দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ফল আসা শুরু করেন।তিনি আরো বলেন, চাল কুমড়ার জালি সবজি হিসেবে বেশ পরিচিত। সবজি হিসেবে খেতে হলে জালি পরার পর যখন সবুজ বর্ণের রঙ আসতে শুরু হবেন আর এর ওজন যখন ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয় তখন এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে থাকেন।গ্রামীণ এলাকার বাজারে এ সবজি পিচ প্রতি ১০ -২৫ দামে বিক্রি হলেও শহরের বাজারে এর দাম একটু বেশি হন।

দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের তাহুরা’র বাড়ির টিনের উপর প্রায় ২৫-৩০ টার মতো চালকুমড়ার রয়েছেন।সাইজও বেশ বড়। ছবি উঠানোর পর তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি বছরের মতোই এবারও তার ঘরের মাচা আর বাড়ির উঠানের মাচায় এ দুই জাগাতে লাগানো গাছে প্রায় ১০০ টার মতো জালি আসছিলো। এর মধ্যে তরকারি জন্য কিছু রান্না করেছিলেন। বাকী প্রায় ৪৫ টা কুমড়া পরিপক্ব হয়েছেন। এরই মধ্যে উঠানের গাছ থেকে চালকুমড়া ঘুচিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখন বাকি রয়েছে ঘরের টিনের চাল থেকে কুমড়া পারার। তিনি আরো বলেন, এ কুমড়ো গুলোর মধ্যে কিছু নিজেরা বড়ি দিব, কিছু ছেলে – মেয়ে সহ আত্মীয় – স্বজনদের দিতে হবে।আর বাকি গুলো বিক্রি করব। কুমড়া বিক্রি টাকা থেকে চাল,বাজার কিনি।নিজেরা বড়ি দিব তার ডাল কিনব। এরই মধ্যে বাজার না থাকার জন্য দুইদিন আগে ২ টা কুমড়া বিক্রি করেছি ২৫০ টাকায়।

যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের ‘মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাসুম আব্দুল্লাহ’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, চালকুমড়া বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আবহমান কাল থেকেই চাষ হয়ে আসছে। চাল কুমড়া চাষের আগে অবশ্যই যে কাজটি করতে হবে তা হল উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা।গ্রামীন জনগোষ্ঠী তাদের বাড়ির উঠান , রান্নাঘর, গোয়াল ঘরের সহ বিভিন্ন স্থানে চালকুমড়ার বীজ রোপন করেন। নিয়মিত গাছে পানি দেয়া, জৈব সার দেয়া ও পরিচর্যার মাধ্যমে গাছটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে।

গাছে ফল আসার পর সবজি হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি বড়ি তৈরি কারার জন্য পরিপক্ব করে থাকেন। ফলে একদিকে যেমন তারা পুষ্টিকর সবজি খেতে পারচ্ছেন এবং প্রক্রিয়াজাত সুস্বাদু, পুষ্টিকর বড়ি তৈরি করে নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি বাজারে বিক্রয় করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার করে তরুণ উদ্যোক্তারা অনলাইনে এই বড়ির বাজারজাত করছে। এতে অসংখ্য মহিলার কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ সারাবছরই চালকুমড়া চাষ করা যায়।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button