বাংলাদেশ-ইইউ সংলাপ : সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হোক

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীতে। সংলাপে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গুরুত্ব পেয়েছে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো। এসব ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ইইউ একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে একটি অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) সই করতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। জানা গেছে, এ চুক্তিতে থাকবে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, অন্তর্জাল নিরাপত্তা কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো। আর নতুন এ আইনি কাঠামোর ভিত্তি হবে মানবাধিকার।
ইউরোপের ২৭টি উন্নত দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠলে তা বাংলাদেশের জন্য নানা ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে, সন্দেহ নেই। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণও বটে। তাই এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি কবে স্বাক্ষর হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির আবহের মধ্যেই এটি সম্পাদনের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করব। এর একটি আলোচনার প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের যে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যাত্রা রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিলে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে।’
একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় দেশটির জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেমন স্বার্থ রয়েছে, তেমনি ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাঝে নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থও। এ সুযোগকে কীভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো যায়, সেই কৌশল গ্রহণ করতে হবে আমাদের নীতিনির্ধারকদের
এ সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। সংলাপ শেষে ইইউর প্রতিনিধি এনরিকে মোরার বক্তব্যেও সেটা বোঝা গেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুটি কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছি। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্জন। এ জন্য আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাই। অন্যটি হচ্ছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ও কৌশল হচ্ছে এখানে আরও বড় পরিসরে অবস্থান নেয়া। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়াতে চাই।’
একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় দেশটির জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেমন স্বার্থ রয়েছে, তেমনি ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাঝে নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থও। এ সুযোগকে কীভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো যায়, সেই কৌশল গ্রহণ করতে হবে আমাদের নীতিনির্ধারকদের। ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সমপ্রসারিত করার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ওইসব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের। রোহিঙ্গা সংকটের মতো ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা ইইউর সমর্থন প্রত্যাশা করতে পারি। ইইউ দেশগুলোতে পর্যটনের ক্ষেত্রেও আমরা চাইতে পারি বিশেষ সুবিধা। কাজেই বাংলাদেশ-ইইউ সংলাপের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা যত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেবে ততই মঙ্গল।