জবিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান : নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিন

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদানের বিষয়টি কিছুদিন পরপর আলোচনায় আসে। জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেশির ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিদ্যাপীঠে বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতাও প্রায় শূন্যের কোটায়। এতে যেকোনো দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জানা যায়, কোন ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা নির্ণয়ের জন্য জবি কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দলকে দায়িত্ব দেয়। তারা অনুসন্ধান চালিয়ে চারটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ভবনগুলো ব্যাপকভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১১০ বছরের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনটি ঘষামাজা করে চালানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব ধরনের কার্যক্রম। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই জরুরি বহির্গমন পথ নেই। নতুন একাডেমিক ভবন ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে একাধিক সিঁড়ি থাকলেও সুবিশাল স্থাপনার তুলনায় সেগুলো একেবারেই সরু।
১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের একটি হলরুমের (টেলিভিশন কক্ষ) ছাদ ধসে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ৪০ জন, আহত হন শতাধিক মানুষ। এক তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে একশ বছরের বেশি পুরোনো জীর্ণ ভবনটি ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। আগে থেকে যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হলে জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেকোনো জরাজীর্ণ ভবন সময়মতো সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের স্থায়িত্বকাল পূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বস্তুত বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটে। সরকারি অর্থে নির্মিত প্রকল্পের প্রতিটি স্থাপনা যাতে পুরোপুরি ত্রুটিমুক্তভাবে নির্মাণ করা হয়, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংকটের বিষয়টিও উদ্বেগজনক। জবির পুরোনো ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকার মধ্যে যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু নির্মাণাধীন ১৩ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের (নিউ বিল্ডিং) অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংকট দূর করার পাশাপাশি এগুলো যাতে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করা বা গবেষণার সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মনে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এমন আতঙ্ক নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে এবং গবেষণায় পুরোপরি মনোনিবেশ করতে পারবে না। পুরান ঢাকার নিমতলী এবং রাজধানীর অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অগ্নিনির্বাপণ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার শেষ ধাপ। কাজেই শেষ ধাপ নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি কোনো ভবনে যাতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত না ঘটে সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকেই যায়।