আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলুন
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি-পরবর্তী অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে; কিন্তু বর্তমানে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কেননা এখন প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার সময় নয়, এখন মূলত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে আর এ জন্য সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়া, মুদ্রা বিনিয়ম হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণ না করা এবং এলসি খোলা নিয়ন্ত্রণ না করে চাহিদার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ কাঠামোগত সংস্কার দরকার। বিশেষ করে একটি কর কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের কর আদায় হার বিশ্বের প্রায় সব দেশের চেয়ে কম। স্বস্তির বিষয় হলো গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের চার মাসে অর্থনৈতিক সূচকগুলো ভালো অবস্থানে আছে; যেমন-গত ৪ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ দশমিক ১৯৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া রপ্তানি ১৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, এটি গত অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের ৪ মাসে ছিল ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার। সূচকগুলোর এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি।
দেশের পরিশ্রমী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন; আশা করা যায়, এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে তারা। তবে দেশে বৈষম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে, এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বাজারব্যবস্থা ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা জরুরি। বস্তুত কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সবকিছু বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত
করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামোর করুণ পরিণতির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে চলেছেন বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্ভাব্য বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকে যেকোনো আর্থিক মন্দার চেয়ে খারাপ হওয়ার আভাস দিয়েছেন। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও এসব বিষয়, বিশেষ করে করোনা মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিপর্যয় নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল। আশঙ্কার বিষয় হলো ইতোমধ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টির আলামত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, যা নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা গভীরভাবে চিন্তিত। অবশ্য সরকার এগুলো সামাল দেয়ার জন্য অনেকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে তা বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুষম বণ্টনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। অতীতে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ অতিক্রম করে এগিয়েছে। দেশের পরিশ্রমী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন; আশা করা যায়, এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে তারা। তবে দেশে বৈষম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে, এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বাজারব্যবস্থা ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা জরুরি। বস্তুত কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সবকিছু বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।