ফিচারসারা বাংলা

আজ নবান্ন উৎসব

বাঙালির নবান্ন উৎসব এলো। ফসলকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন উৎসবে মাতার আনন্দঘন দিন ১ অগ্রহায়ণ আজ। আজ নতুন ধানে হবে নবান্ন। শহুরে প্রলোভন আর করপোরেট সংস্কৃতির চোরারাবলিতে পা দিয়ে আটকে পড়া বিভ্রান্ত প্রজন্মকে শেকড়ের সংস্কৃতির সন্ধান দেবে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নবান্ন উৎসব। তদুপরি আজ এমন এক সময়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে যখন গোটা বিশ্বে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ফতুর হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার। শঙ্কামুক্ত নয় বাংলাদেশও। মুদ্রাস্ফীতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এমনকি দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এ অবস্থায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। উৎপাদন বাড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে আজ বুধবার উদ্যাপিত হবে নবান্ন উৎসব ১৪২৯।

একেবারে অনাদিকাল ধরে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। একই রীতি মেনে দেশজুড়ে আজ হবে নবান্ন উৎসব। গ্রামের মতো নগরেও থাকবে বর্ণাঢ্য আয়োজন। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নাগরিক নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হবে। দিনব্যাপী আয়োজনে লোকায়ত জীবন ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জয়গান করা হবে। সেইসঙ্গে আহ্বান জানানো হবে উৎপাদন বাড়ানোর। অবশ্য তারও আগে শুরু হয়ে গিয়েছিল ফসলের ঋতু হেমন্ত। কার্তিকের প্রথম দিন নতুন ঋতুকে স্বাগত জানানো হয়। এক সময় মরা কার্তিকে এসে কৃষকের গোলা শূন্য হয়ে যেত। অভাব দেখা দিত খাবারের। সবাই তখন তাকিয়ে থাকত অগ্রহায়ণের দিকে। তবে যতদিন গেছে ততই বদলে গেছে হিসাব-নিকাশ। কার্তিক আর আগের মতো নেই। এ মাসেও পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধান। বস্তুত শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে এখন মোটামুটি সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন কৃষক। বিভিন্ন ফসল ফলান তারা। আয় রোজগারও ভালো। কার্তিক মাসে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে আগাম আমন ধানের শীষ। পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। ঠিক এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ফসল কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। বরগুনা, রংপুর, নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলার কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। কৃষকরা বাড়তি লোক নিয়ে ফসলের মাঠে যাচ্ছেন। দিনভর চলছে ধান কাটা। তারপর ফসল কাঁধে বাড়ি ফিরছেন। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ কিষানী। ধান মাড়াই, শুকিয়ে ঘরে তোলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় খুশি মনেই অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে তাদের। তবে মূল অপেক্ষা ছিল অগ্রহায়ণের। লোক কবির ভাষায়- ‘আইলো অঘ্রাণ খুশীতে নাচে প্রাণ/চাষি কাচিতে দিলো শান/কাচি হাতে কচ কচা কচ কাটে চাষি পাকা ধান…।’ অগ্রহায়ণ মানেই আমন ধান কাটার মাস। ফলন ও উৎপাদনে বোরোর চেয়ে আমন পিছিয়ে থাকলেও প্রতি বছর এর উৎপাদন বাড়ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০ সালে আমনের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টন, যা মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ। এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আজকের নবান্ন উৎসব তাই যথারীতি আনন্দঘন হবে। ফলন বাড়িয়ে আনন্দকে আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করা হবে বলেও প্রত্যাশা। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন চালের রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবই নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন সেগুলোর অন্যতম। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব শুরু হয়। হাজার হাজার বছর আগে কৃষি প্রথা যখন চালু হয়েছিল, অনুমান করা হয়, তখন থেকেই নবান্ন উৎসব উদ্যাপন হয়ে আসছে।

ঘরে ফসল তোলার আনন্দে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। ফসল কাটার আগে কৃষকরা বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে ঘরের চালে বেঁধে রাখতেন। বাকি ধান থেকে চাল করে সে চালে পায়েস করা হতো। এছাড়াও নবান্ন উৎসবের দিন গৃহস্থ বাড়িতে নানা পদ রান্না হতো। শাক, ভর্তা, ভাজিসহ কুড়ি থেকে চল্লিশ পদের তরকারি রান্না করা হতো কোনো কোনো বাড়িতে।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button