ঝিনাইদহ সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর বাজারে মেলার নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য। মেলার ঐতিহ্য ভেঙ্গে অশ্লিলতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যুবতী মেয়েরা মঞ্চে উঠে নগ্ন অশ্লীলভাবে নাচানাচি করছে। আর নগ্নতার শেষ দৃশ্য অবলোকন করছে যুব সমাজ। ফলে বেসামাল যুব সমাজ যাত্রা ও ভ্যারাইটি শো দেখতে ছুটছে উপজেলার ভবানীপুর বাজারের মেলায়।
নগ্নতার পাশাপাশি চলছে গাজা, মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, জুয়ার আসর, হাউজি, চরকি, ওয়ানটেন, ফোরগুটি ও দৈনিক বিকাশ নামের (র্যাফেলড্র)লটারি। দুরদুরান্ত থেকে আসা জুয়াড়ি মেহমানদের ফূর্তি করার জন্য বাইরে থেকে যুবতী মেয়েদের আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। মেলা হচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। মেলার অনুমতি নিয়ে জুয়া খেলাকেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে। ভবানীপুর বাজারে র্যাফেল ড্র’র নামে ভিন্ন ধাচের জুয়া চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি প্রচার মাইক গ্রাম গঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আজানের সময়ও মাইক বন্দ করা হচ্ছেনা।
আয়োজকদের এ সব কর্মকান্ডে এলাকায় ছি ছি রব উঠেছে। তাদের দাবী ভবানীপুরের মেলায় আয়োজকদের এই ঘৃনিত কর্মকান্ডে ঐতিয্যবাহী এ মেলায় ভাল মানুষের সমাগম কমে এসেছে। পুলিশ ক্যাম্প থেকে মাত্র ৫০ গজ দুরে এসব অপকর্ম পরিচালিত হলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১৩ মে। একদিকে এইচএসসি পরীক্ষা অন্যদিকে হরিণাকুন্ডু সন্ত্রাস কবলিত উপজেলা। এ মুহুর্তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রার অনুমতি দেয়ায় হতবাক হয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এছাড়া এ উপজেলাতে গাজী ওমর ফারুক নামে এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবিররা।
সম্প্রতি কায়েতপাড়া বাওড়ের সভাপতি জিয়াকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। উপজেলা জুড়ে মোটর সাইকেল চুরি, ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে চরম আকারে। ভবানীপুর সন্ত্রাস কবলিত ৩ উপজেলার সীমান্ত হওয়ায় মেলাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে ধারনা করছেন এলাকাবাসী। এ মেলায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকাবাসি আরও জানায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলা শহরে গত কয়েক মাস আগে থানার ২০০ গজ দুরে মেলার নামে নগ্ন নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ানটেন খেলা হয়েছিল। আগে মেলা বসাতে সরকারের কোন অনুমতি প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু এখন লাগে।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুরের বাজার কমিটির ব্যানারে ১৪ এপ্রিল থেকে মেলার নামে ভ্যারাইটি শো ও জুয়ার আসর বসছে প্রতিরাতে। উপজেলার ভবানীপুর এলাকার সরকার দলীয় কিছু প্রভাবশালীদের তত্বাবধানে এসব অপকর্ম পরিচালিত হচ্ছে। মেলার নামে অশ্লিলতার বিষবাস্প ছড়িয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে ১৫ দিনের জন্য মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। জুয়া, হাউজি বাম্পার, লটারী ওয়ানটেনসহ ভ্যারাইটি শো’র অনুমতি দেয়া না হলেও সেগুলোই চালানো হচ্ছে এ মেলায়। মেলার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে এবার মেলায় অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এ রকম জবরদস্তি মুলক কর্মকান্ড চলছে হরিণাকুন্ডুর ভবানীপুর বাজারের মেলা নামক পারুল অপেরায়।
জেলা প্রশাসন এলআর তহবিলে টাকা নিয়ে মেলার অনুমতি দিয়েছেন। এছাড়া থানা পুলিশ প্রতি রাতে নিয়মিত ভাবে উৎকোচ নিচ্ছে বলে সংম্লিষ্টরা জানিয়েছে। তবে এ মেলার পাশে অবস্থিত ভবানীপুর ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা অদৃশ্য কারণে চুপচাপ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেলার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ব্যাক্তি জানিয়েছেন, হরিণাকুন্ডু থানার ওসিকে ম্যানেজ করে মেলায় এসব চালানো হচ্ছে।
হরিনাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময় মেলার নামে জুয়া ও নগ্ন যাত্রা চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান পরীক্ষা শেষের দিকে।
তাহেরহুদা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, জুয়া, হ্উাসি, ওয়ানটেন, অশ্লিলতা আর নগ্ন নৃত্যের কারনে এলাকার পরিবেশ নষ্ট চচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, অশ্লিলতা আর জুয়ার কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। এগুলো চললে অবশ্যই মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে। মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর বন্দ করার জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।